এ রাজ্যে একসময় যা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে, এখন সেই অসাধ্য সাধনই করছে কলকাতার মেডিকা ক্যানসার ইনস্টিটিউট (Medica Cancer Institute) ও মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল (Medica Robotic Surgery)। কিডনি ক্যানসারের জটিল অস্ত্রোপচার এখন হচ্ছে সহজে ও খুব কম সময়ে। যন্ত্রণাহীন নিখুঁত অস্ত্রোপচারে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও কম। রোবোটিক্সের সাহায্য কিডনি ক্যানসারের রোগীর নিখুঁজ সার্জারি করে নজির গড়েছে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল।
পূর্ব ভারতে অন্যতম বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে একটি মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল (Medica Superspeciality Hospital )। সম্প্রতি এই গ্রুপের অনকোলজি বিভাগও খোলা হয়েছে। ক্যানসারের সবরকম জটিল চিকিৎসা এখানে হয়। বিশেষ করে ‘দ্য ভিঞ্চি এক্স’ সার্জিক্যাল রোবোটিক সার্জারির (Robotic Surgery) মতো উন্নত পদ্ধতির অস্ত্রোপচারেও রেকর্ড করেছে মেডিকা। ৭৪ বছরের এক রোগী যিনি কিডনি ক্যানসারে ভুগছেন, পাশাপাশি অন্যান্য জটিল কোমর্বিডিটিও রয়েছে তাঁর অস্ত্রোপচার গতানুগতিক নিয়মে হওয়া সম্ভব ছিল না। অভিজ্ঞ অনকোলজিস্টরা বুঝেছিলেন, ওই রোগীর কিডনিতে দ্রুত অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু রোগীর ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ ও পার্কিনসনস রোগ থাকায় সার্জারিতে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি বেশি ছিল। তাই রোবোটিক্সের সাহায্য নেন মেডিকার চিকিৎসকরা। সেক্ষেত্রে চতুর্থ প্রজন্মের সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি ‘দ্য ভিঞ্চি’-র প্রয়োগই করেছেন ডাক্তারবাবুরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা জসিমুদ্দিন লস্কর দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। পাশাপাশি, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ডিমেনশিয়া ও পার্কিনসনস রোগও ছিল তাঁর। ডিমেনশিয়া ও পার্কিনসনসে সাধারণত বেশি বয়সিরাই আক্রান্ত হন। ঠিক কী কারণে মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হন, তার সদুত্তর চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও পুরোপুরি দিতে পারেনি। তবে একটা বিষয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত। বংশে এই রোগের ইতিহাস থাকলে, পরের প্রজন্মের মধ্যে পার্কিনসনসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়। কাজেই কিডনির রোগের সঙ্গে স্নায়বিক জটিল সমস্যাও ছিল রোগীর। এত কিছু কোমর্বিডিটি থাকায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে তাঁর অস্ত্রোপচার করা সহজ হত না।
মেডিকা ক্যানসার ইনস্টিটিউট (Medica Cancer Institute) ও মেডিকা সুপারস্পেশালিটি (Medica Superspeciality Hospital ) হাসপাতালের ইউরোলজি ও সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. অভয় কুমার বলছেন, অবিলম্বে কিডনি বাদ দিতে হত ওই রোগীর। কিন্তু স্নায়বিক জটিলতা থাকায় তাতে অন্য় সমস্য়া দেখা দিত। রেকটাম থেকে রক্তক্ষরণও হচ্ছিল রোগীর। তাই রোবোটিক সার্জারিই নিরাপদ বলে মনে করেন ডাক্তাররা।
রোবোটিক্সের ব্যবহার এখন বিশ্বজুড়েই। বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে চিকিৎসা, ডিজিটাল ভারতেও রমরম করে ঢুকে বাড়ছে রোবোটিক্সের ব্যবহার। যে কোনও জটিল অস্ত্রোপচারে রোবোটিক সার্জারির প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন ডাক্তাররা। রোগীর শরীরে ছুরি-কাঁচি চালিয়ে নয়, ছোট ছোট গোটা পাঁচেক ছিদ্র করে রোবটের হাত (যা মাত্র ১ সেন্টিমিটার চওড়া) এবং ছোট ক্যামেরা ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেই অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। রোবট হাতের কব্জি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে, যা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই শরীরের যে কোনও দুর্গম এবং ছোট জায়গায় পৌঁছে গিয়ে জটিল অস্ত্রোপচার অথবা নিখুঁত ভাবে সেলাই করা রোবটের পক্ষে অনেক সহজ। শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি না করে শুধুমাত্র আক্রান্ত স্থানেই নিখুঁত অস্ত্রোপচার সম্ভব একমাত্র রোবোটিক্সেই।
১৯৮৫ সালে নিউরোলজিক্যাল বায়োপসি করতে প্রথম রোবটের সাহায্য নেওয়া হয়। এর পরে ২০০০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ভিঞ্চি’ নামে একটি সংস্থা এই রোবট বাজারে আনার পরে চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যায়। এতদিন ভিন রাজ্য ও বাইরের দেশগুলিতেই দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল রোবোটিক্সের প্রয়োগ করছিলেন ডাক্তাররা। কলকাতায় মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল সেখানে রেকর্ড করেছে। স্ত্রী-রোগ সংক্রান্ত যে কোনও অস্ত্রোপচারই হোক কিংবা মাথা-গলা, কিডনি-লিভার-অগ্ন্যাশয়-থাইরয়েড-প্রস্টেট বা জরায়ুতে অস্ত্রোপচার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, সব ক্ষেত্রেই রোবট দিয়ে বা যান্ত্রিক হাতের সাহায্যে সার্জারি করানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। সেখানে সাফল্যও আসছে।
কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট ডা. কল্যাণ সরকার বলছেন, “রোবোটিক সার্জারি সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি বলেই মনে করি। পূর্ব ভারতে রোবোটিক সার্জারিতে অসাধারণ সাফল্য় পেয়েছে মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল।খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে
ইউটিউবে এনবিএস-এর সব খবর দেখুন। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেলটি: